টেকনিক্যাল এসইও কি ? বিস্তারিত গাইডলাইন।

টেকনিকেল শব্দটি ইংরেজী। এর অর্থ প্রযুক্তি অর্থাৎ টেকনিক্যাল এসইও মানে প্রযুক্তিগত এসইও। টেকনিক্যাল এসইও বা প্রযুক্তিগত এসইও হচ্ছে আপনার ওয়েবসাইট সার্চ ইঞ্জিনের প্রযুক্তিগত প্রয়োজনীয়তা পূরণ করে। যাতে গুগল টপ পেজে রেংকিং এ থাকে।

আজকের এই পোস্টের মাধ্যমে আমি আপনাদের টেকনিক্যাল এসইও কি এবং ওয়েবসাইটে টেকনিক্যাল এসইও’র প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করবো। তো চলুন শুরু করা যাক।

টেকনিক্যাল এসইও কি ?

টেকনিক্যাল এসইও হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া বা পদ্ধতি যা দ্বারা একটি ওয়েবসাইটকে অরগানিক র‌্যাঙ্কিংপাওয়ার জন্য আধুনিক সার্চ ইঞ্জিনগুলির প্রযুক্তিগত প্রয়োজনীয়তা পূরণ করে।

টেকনিক্যাল এসইও এর প্রয়োজনীয়তা

আপনি যদি আপনার ওয়েবসাইটে  অনপেজ এসইও এবং অফপেজ এসইও কৌশল সঠিকভাবে ব্যবহার করে থাকেন তার মানে এই না যে আপনি সার্চ ইঞ্জিন গুলোতে অবশ্যই র‌্যাঙ্ক করবেন। কারণ হল আপনার ওয়েবসাইটে যদি টেকনিক্যাল কোন সমস্যা থাকে তাহলে আপনি সার্চ ইঞ্জিন এ র‌্যাঙ্ক করতে পারবেন না।

টেকনিক্যাল এসইও’র মধ্যে রয়েছে ওয়েবসাইট স্ট্রাকচার এবং ডিজাইন, পেজ লোডিং স্পীড, মোবাইল ইউজেবিলিটি, সাইটম্যাপ ইত্যাদি।

টেকনিক্যাল এসইও’র প্রক্রিয়া সমুহঃ

  • ওয়েবসাইট স্ট্রাকচার এবং ডিজাইন
  • পেজ লোডিং স্পীড
  • মোবাইল ইউজেবিলিটি
  • সাইটম্যাপ
  • রোবট টেক্সট
  • এস এস এল সার্টিফিকেট
  • ফিক্সড ব্রোকেন লিংক
  • ক্রলার এরর মুক্ত রাখা
  • ইউ আর এল স্ট্রাকচার
  • স্ট্রাকচার্ড ডেটা
  • ক্যানোনিকাল ট্যাগ
  • ৪০৪ পেজ এরর মুক্ত রাখা
  • ৩০১ রিডাইরেক্ট

ওয়েবসাইট স্ট্রাকচার এবং ডিজাইন

ওয়েবসাইট স্ট্রাকচার এবং ডিজাইন যদি ভালো ও সুসংগঠিত হয় তাহলে ভিজিটররা আপনার ওয়েবসাইট বেশি পছন্দ করবে।

আর ভিজিটররা যত বেশি আপনার ওয়েবসাইট ভিজিট করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে সার্চ ইঞ্জিনগুলিও আপনার ওয়েবসাইট  তত বেশি পছন্দ করবে এবং র‌্যাঙ্ক করতে সহায়তা করবে।

পেজ লোডিং স্পীড

সার্চ ইঞ্জিনের জন্য পেজ লোডিং স্পিড অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । পেজ লোডিং টাইমের উপরে কোন একটি ওয়েবসাইটের র‍্যাঙ্কিং অনেকাংশে নির্ভর করে। আর প্রতিটি সার্চ ইঞ্জিন এই বিষয়টি অনেক বেশি গুরুত্ব দেয় ।

বিশেষতঃ মোবাইল পেজ স্পীড । কারন অধীকাংশ ইউজার স্মার্ট ফোন। কারন হল আপনার ওয়েবসাইটের পেজ স্পীড ধীর গতির হওয়ার জন্য ওয়েবসাইটের কনভার্সন রেট অনেক কমে যাবে তার সাথে ওয়েবসাইটের বাউন্স রেট অনেক বেড়ে যাবে।

আপনি GTMetrix , Google Page Insight , অথবা Pingdom Website Speed Test এই রকম টুলগুলির মাধ্যমে আপনার  ওয়েবসাইটের স্পীড চেক করতে পারেন এবং এরর গুলো খুঁজে বের করে সমাধান করে পেজ লোডিং স্পীড বাড়াতে পারেন।

মোবাইল ইউজেবিলিটি

বর্তমান সময়ে যে-কোনো ওয়েবসাইট ভিজিট করার ক্ষেত্রে ল্যাপটপ, ডেস্কটপ, ট্যাবলেট বা কম্পিউটারের পাশাপাশি মোবাইল ডিভাইস ব্যবহার অনেক হারে বেড়ে গেছে। যেসব ওয়েবসাইট গুলো মোবাইল ফ্রেন্ডলি এবং ফাস্ট লোডিং স্পীড হয়। সেগুলোকে সার্চ ইঞ্জিন বেশি গুরুত্ব দেয়।

ওয়েবসাইট তৈরীর সময় মোবাইল ফ্রেন্ডলি টেস্ট করতে হয়। যদি কোন ওয়েবসাইট মোবাইল ফ্রেন্ডলি না হয় সেক্ষেত্রে ঐ ওয়েবসাইটের গ্রহণ যোগ্যতা থাকে না সার্চ ইঞ্জিন গুলোর কাছে।

তাই ওয়েবসাইট বানানোর সময় অবশ্যই সেটাকে রেসপনসিভ বা যেকোন ডিভাইসে যাতে দ্রুত লোড সেরকম ভাবে বানাতে হবে। মোবাইল ফ্রেন্ডলি টেস্ট করার জন্য প্রয়োজনে  Google Mobile Friendlly Test নামের টুলস টি ব্যবহার করা যেতে পারে।

এস এস এল সার্টিফিকেট

SSL এর পূর্ণ রপ Secure Sockets Layer। এই লেয়ারের মধ্য দিয়ে যখন কোন তথ্য আদান প্রদান করা হয় তখন তা খুব সহজেই এনক্রিপ্টেড হয়ে যায়।এসএসএল এর এই এনক্রিপশন আপনার ক্রেডিট কার্ড,নাম,ঠিকানা এবং আপনার একান্ত বেক্তিগত তথ্য গুলো চুরি হওয়া থেকে রোধ করে।

কোন একটি ওয়েবসাইটকে সিকিউর বা নিরাপদ(Secure) করার জন্য SSL Certificate ব্যবহৃত হয়। 

ওয়েবসাইট র‍্যাঙ্কিং এর জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। SSL সার্টিফিকেট আপনার ওয়েবসাইটকে HTTP থেকে HTTPS করে দেয় যা আপনার ওয়েবসাইটের ভিজিটর ও কাস্টমারদের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ায়।

প্রতিটি ওয়েবসাইটেই এস এস এল সার্টিফিকেট Install করতে হয়। ইন্সটল করলে ওয়েবসাইটটিতে https কার্যকর হয়।

যদি আপনার ওয়েবসাইটে  SSL সার্টিফিকেট ইনস্টল করা না থাকে তাহলে URL বারের বাম দিকে “Your connection to this site is not secure” লাল কালারের একটি মেসেজ শো করবে।

আর যদি আপনার  ওয়েবসাইটে SSL সার্টিফিকেট ইনস্টল করা থাকে সেই ক্ষেত্রে সেখানে একটি লক আইকন থাকবে যা ক্লিক করলে “Connection is secure” সবুজ কালারের ম্যাসেজটি শো করবে।

এখন প্রায় সমস্ত ওয়েব হোস্টিং কোম্পানি প্রথম বছরের জন্য তাদের প্যাকেজের সাথে ফ্রিতে SSL certificate প্রদান করে থাকে। এছাড়াও আপনি চাইলে আলাদাভাবে ক্রয় করেও আপনার  ওয়েবসাইটে SSL certificate ইনস্টল করতে পারেন।

ফিক্স ব্রোকেন লিংক

ব্রোকেন লিংক হচ্ছে সেই সকল লিংক যেগুলো ঠিকমত কাজ করে না। অর্থাৎ যখন ওয়েবসাইটে রেফার করা কোন লিংক ক্লিক করা হয়। ঐ লিংক গুলাতে তখন কোন ফলাফল দেখায় না। সেগুলাই মূলত ব্রোকেন লিংক। 

এসব লিংক ওয়েবসাইটের জন্য খুবই  বিপদজনক। ওয়েবসাইটে অধিক পরিমাণে ব্রোকেন লিংক থাকলে সাইটের গ্রহণ যোগ্যতা হ্রাস পায় সার্চ ইঞ্জিন’র কাছে। 

যা আপনার ওয়েবসাইট র‍্যাঙ্কিং এর ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করে এবং এর পাশাপাশি গুগল অ্যাডসেন্স এর মধ্যেও সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।  কোন একটি ওয়েবসাইটে ব্লগ পোষ্টের বা পেজের সংখ্যা যত বেশি হবে ব্রোকেন লিংকের সংখ্যাও বেড়ে যাবে।

ব্রোকেন লিংক চেকার টুলস দ্বারা খুব সহজেই ব্রোকেন লিংকগুলো খুজে বের করা যায় । পরবর্তীতে সেই লিংক গুলোকে রিডাইরেক্ট করে নিতে হয়।

Crawler এরর মুক্ত রাখা

আপনার ওয়েবসাইটটি Crawler এরর মুক্ত রাখতে হবে। তা না হলে সার্চ ইঞ্জিন বট আপনার ওয়েবসাইটটি ভিজিট করতে পারবে না। ফলে আপনার ওয়েবসাইটের বিভিন্ন পেজ এবং পোস্ট ইনডেক্সিং হবে না। আপনি র‍্যাঙ্কিং এ আসতে পারবেন না। Crawler এরর গুলো আপনি গুগল সার্চ কনসোলএর  Coverage অপশন থেকে  জানতে পারবেন।

ইউ আর এল স্ট্রাকচার

আপনার সাইটের ইউআরএল গুলো সব ঠিক ঠাক আছে কিনা তা নিয়মিত যাচাই করতে হবে। একটি ভাল ইউ আর এল লেখার নিয়মসমুহঃ

  • Remove Extra Words
  • Relevant Keywords
  • Easily Readable
  • Utilize Hyphens and Underscores
  • Match URL and Titles
  • Short URL Is Best
  • Case sensitivity
  • Avoid keyword stuffing, etc.

স্ট্রাকচার্ড ডেটা

কোন ওয়েবপেজের কন্টেন্ট বোঝার জন্য সার্চ ইঞ্জিন বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। ওয়েবপৃষ্ঠায় স্ট্রাকচার্ড ডেটা ব্যবহার করে আপনি সার্চ ইঞ্জিন গুলোকে ওয়েবপৃষ্ঠার মানে বুঝতে সাহায্য করতে পারেন।

বিস্তারিত জানতে structured data এই লিঙ্কটিতে ক্লিক করুন।

থিন কনটেন্ট

থিন কনটেন্ট কোন একটি ওয়েব পৃষ্ঠায় বা ব্লগপোস্টে যদি খুব অল্প পরিমান কনটেন্ট থাকে তখন ঐ কনটেন্ট গুলিকে থিন কনটেন্ট বলে। এসব কনটেন্টের ভ্যালুব্যবহারকারীদের কাছে নেই বললেই চলে।

এমনকি সার্চ ইঞ্জিন গুলোর কাছেও এই কনটেন্টের কোন ভ্যালু থাকে না। সর্বোপরি, গুগল এসব পৃষ্ঠাগুলি পছন্দ করে না। যেগুলি কীওয়ার্ড দিয়ে স্টাফ করা থাকে ।

ডুপ্লিকেট কনটেন্ট

ডুপ্লিকেট কনটেন্ট বলতে এমন একটি কনটেন্ট কে বোঝায় যা ইন্টারনেটে একাধিক সাইটে প্রদর্শিত হয়। যদি একই বিষয়বস্তু একাধিক ওয়েব ঠিকানায় প্রদর্শিত হয়, তাহলে আপনি ডুপ্লিকেট কনটেন্ট পেয়েছেন।

প্রযুক্তিগতভাবে জরিমানা না হলেও, ডুপ্লিকেট কনটেন্ট সার্চ ইঞ্জিনের র‌্যাঙ্কিংয়ে প্রভাব ফেলতে পারে। যখন একই বিষয়বস্তু একাধিক ওয়েব ঠিকানায় প্রদর্শিত হয় তখন সার্চ ইঞ্জিন গুলোর নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে পরে যে কোন প্রদত্ত অনুসন্ধানের প্রশ্নের সাথে কোন সংস্করণটি বেশি প্রাসঙ্গিক ।

404 এরর মুক্ত রাখা

ধরুন অনিবার্য কারণ বসত আপনার ওয়েবসাইটের কোনো একটি পেজ ডিলিট হয়ে গেছে বা আপনি কোনো কারণে তা ডিলিট করে দিয়েছেন। আবার সার্চ ইঞ্জিন যদি ঐ পেজ বা পোস্ট টিকে ইনডেক্স করে থাকে তবে সেই ক্ষেত্রে কেউ যদি আপনার ডিলিট হওয়া পেজেটিতে বা পোস্টটিতে ভিজিট করে তাহলে সে 404 Errors বা Page not found মেসেজটি দেখতে পাবে।

ওয়েবসাইটে অল্প পরিমান পেজ বা পোস্ট থাকলে সেই ক্ষেত্রে বেশি সমস্যা হয় না কিন্তু যদি আপনার ওয়েবসাইটে ২৫০-৫০০ পোস্ট থাকে সেই ক্ষেত্রে অনেক 404 Errors আসতে পারে।

আচ্ছা একটু ক্লিয়ার করে বলি, কোন কারনে আপনার সাইটের একটি ব্লগপোষ্ট ডিলিট করলেন, কিন্তু সেই পোষ্টের করা ব্যাকলিংক বা ইন্টারনাল লিংক কিংবা সোশ্যাল সাইটে শেয়ার করা লিংক গুলো কিন্তু ঐ সকল ওয়েবসাইটে রয়েই গেছে।

যদি কোন ভিজিটর সেই রিমুভ বা ডিলিট করা লিংকে প্রবেশ করে তবে সে একটি 404 Errors বা Page not found  মেসেজটি দেখতে পায় এবং এর ফলে সেই ভিজিটর ওয়েবসাইটটি থেকে বের হয়ে যায়।

যার ফলে সাইটের বাউন্স রেট বেড়ে যায় এবং ওয়েবসাইট র‍্যাংকিং বাধাগ্রস্থ করে। সুতরাং এই বিষয়টিও সতর্কতার সহিত লক্ষ্য রাখা উচিত । আপনি চাইলে এই বিষয়গুলি গুগল সার্চ কনসোল থেকে জানতে পারবেন ও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।

1 thought on “টেকনিক্যাল এসইও কি ? বিস্তারিত গাইডলাইন।”

  1. Pingback: নিস কি ? কিভাবে নিস বাছাই করবেন ? গাইডলাইন। - Tech Tricks

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
× How can I help you?